Famous Bangla poet, especially known for his satirical sense of humour, Tarapada Roy is no longer among us. After suffering from kidney
ailments for several months, he left us this (25th August,2007) evening.
He was so passionate about poems and literature that he named his only son after the literature magazine "Krittibas", which he once used to run.
I may not be able count how many times I heard the recitation of his famous poem "Daridra Rekha" in different different occasions.
দারিদ্র্য রেখা // তারাপদ রায়আমি নিতান্ত গরীব ছিলাম, খুবই গরীব।
আমার ক্ষুধার অন্ন ছিল না,
আমার লজ্জা নিবারণের কাপড় ছিল না,
আমার মাথার উপরে আচ্ছাদন ছিল না।
অসীম দয়ার শরীর আপনার,
আপনি এসে আমাকে বললেন,
না, গরীব কথাটা খুব খারাপ,
ওতে মানুষের মর্যাদা হানি হয়,
তুমি আসলে দরিদ্র।
অপরিসীম দারিদ্র্যের মধ্যে আমার কষ্টের দিন,
আমার কষ্টের দিন, দিনের পর দিন আর শেষ হয় না,
আমি আরো জীর্ণ আরো ক্লিষ্ট হয়ে গেলাম।
হঠাৎ আপনি আবার এলেন, এসে বললেন,
দ্যাখো, বিবেচনা করে দেখলাম,
দরিদ্র শব্দটিও ভালো নয়, তুমি হলে নিঃস্ব।
দীর্ঘ নিঃস্বতায় আমার দিন রাত্রি,
গনগনে গরমে ধুঁকতে ধুঁকতে,
শীতের রাতের ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে,
বর্ষার জলে ভিজতে ভিজতে,
আমি নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে গেলাম।
আপনার কিন্তু ক্লান্তি নেই,
আপনি আবার এলেন, আপনি বললেন,
তোমার নিঃস্বতার কোনো মানে হয় না,
তুমি নিঃস্ব হবে কেন,
তোমাকে চিরকাল শুধু বঞ্চনা করা হয়েছে,
তুমি বঞ্চিত, তুমি চিরবঞ্চিত।
আমার বঞ্চনার অবসান নেই,
বছরের পর বছর আধপেটা খেয়ে,
উদোম আকাশের নিচে রাস্তায় শুয়ে,
কঙ্কালসার আমার বেঁচে থাকা।
কিন্তু আপনি আমাকে ভোলেননি,
এবার আপনার মুষ্টিবদ্ধ হাত,
আপনি এসে উদাত্ত কণ্ঠে ডাক দিলেন,
জাগো, জাগো সর্বহারা।
তখন আর আমার জাগবার ক্ষমতা নেই,
ক্ষুধায় অনাহারে আমি শেষ হয়ে এসেছি,
আমার বুকের পাঁজর হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে,
আপনার উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে
আমি তাল মেলাতে পারছি না।
ইতিমধ্যে আরো বহুদিন গিয়েছে,
আপনি এখন আরো বুদ্ধিমান,
আরো চৌকস হয়েছেন।
এবার আপনি একটি ব্ল্যাকবোর্ড নিয়ে এসেছেন,
সেখানে চকখড়ি দিয়ে যত্ন করে
একটা ঝকঝকে লম্বা লাইন টেনে দিয়েছেন।
এবার বড় পরিশ্রম হয়েছে আপনার,
কপালের ঘাম মুছে আমাকে বলেছেন,
এই যে রেখা দেখছো, এর নিচে,
অনেক নিচে তুমি রয়েছো।
চমৎকার!
আপনাকে ধন্যবাদ, বহু ধন্যবাদ!
আমার গরীবপনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার দারিদ্র্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার নিঃস্বতার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার বঞ্চনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার সর্বহারাত্বের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আর সবশেষে ওই ঝকঝকে লম্বা রেখাটি,
ওই উজ্জ্বল উপহারটির জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
কিন্তু,
ক্রমশ,
আমার ক্ষুধার অন্ন এখন আরো কমে গেছে,
আমার লজ্জা নিবারণের কাপড় এখন আরো ছিঁড়ে গেছে,
আমার মাথার ওপরের আচ্ছাদন আরো সরে গেছে।
কিন্তু ধন্যবাদ,
হে প্রগাঢ় হিতৈষী, আপনাকে বহু ধন্যবাদ!
Probably this was his last published poem (published in bi-weekly literature magazine Desh - August 2, 2007)
পুরনো শহরতলিতে // তারাপদ রায়আবার ফিরে এলাম,
আর একটু খোঁজ নিয়ে এলেই ভাল হত।
বাড়ির সামনের দিকে
একটা কয়লার দোকান ছিল
কাঠ, কয়লা, কেরোসিন - খুচরো কেনা বেচা,
কেউ চিনতে পারল না
দু'জন রাস্তার লোক বলল,
'এদিকে কোনো কয়লার দোকান নেই
গলির এপারে রাধানাথ দত্তের গ্যাসের দোকান
সেখানে খোঁজখবর নিয়ে দেখুন।'
মনে আছে কয়লার দোকানের পিছনে ছিল বড় উঠোন,
কয়েকটা আম কাঁঠাল গাছ, ভাঙা বারান্দা, ঘর দোর।
এখন তো কিছুই নেই,
শুধু একটা নেমপ্লেট, 'নাগরিক'।
চারতলা বাড়ি, ষোলটা ফ্ল্যাট,
এরই মধ্যে কোনওটায় আমি ফিরে এসেছি।
কিন্তু কয়তলায়, কাদের ফ্ল্যাট?
স্বর্গীয় রূপকবাবুর পদবিটা যেন কী ছিল,
তাঁদের নতুন বাসাবাড়িতে এখন কে থাকে -
কোনও খোঁজখবর রাখি না,
শুধু মনে আছে তাঁর ভাইঝি টুলটুলি।
না। সেই বাড়িটা জগৎসংসারে আর নেই,
টুলটুলিকে কেউ চেনে না।
পুরনো শহরতলির নতুন পাড়ায় বোকার মতো ঘুরি।